insta logo
Loading ...
×

প্লাস্টিক বোতল নতুন রূপে ‘ইকো ব্রিক্স’, তৈরি হচ্ছে সীমানা প্রাচীর, বেঞ্চ, বেড়া

প্লাস্টিক বোতল নতুন রূপে ‘ইকো ব্রিক্স’, তৈরি হচ্ছে সীমানা প্রাচীর, বেঞ্চ, বেড়া

সুইটি চন্দ্র, পুরুলিয়া:

প্লাস্টিক দূষণ সামলাতে এবার ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিল পুরুলিয়া জেলা পরিষদ। একবার ব্যবহার হওয়া বোতলেই ভরা হচ্ছে বালি,মাটি ও ব্যবহৃত পলিথিন। ঢাকনা আটকা দিলেই তা পরিণত হচ্ছে শক্তপোক্ত ‘ইকো ব্রিক্স’-এ—যা ইটের বিকল্প হিসেবে কাজে লাগছে। পার্ক, অফিস-ক্যাম্পাস, বাজার, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেঞ্চ, গাছের বেড়া ও সীমানা প্রাচীর তৈরিতে। এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের উপ-সচিব জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস জানিয়েছেন, “ধারণাটি কয়েক বছর আগের হলেও এবার ১৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েতেই একযোগে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। প্রত্যেক ব্লককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারি ভবনে নতুন ইটের বদলে ইকো ব্রিক্স ব্যবহার করতে।”

এই কাজে অগ্রণী ভূমিকায় জঙ্গলমহল
মানবাজার-১ ব্লকের জিতুজুড়ি ও জয়পুর ব্লকের বড়গ্রাম সহ সাঁতুড়ি, রঘুনাথপুর-১ প্রভৃতি ব্লকে পার্ক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও বাজার সংলগ্ন এলাকায় ইতিমধ্যেই চোখ টানছে রঙিন প্লাস্টিক-ইটের বেঞ্চ ও বেড়া। ধানাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা নিজেরাই বোতল-ইট বানিয়ে স্কুল-চত্বরে বসার জায়গা গড়েছে।

আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবস সামনে রেখে জেলা জুড়ে ১–৩ জুলাই ধরেই সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালিয়েছে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। সাঁতুড়ি ব্লকের বিডিও পার্থ দাস জানিয়েছেন, “হাট-বাজারে প্লাস্টিক ব্যাগ জমা দিলে বদলে দেওয়া হচ্ছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি কাপড়ের ব্যাগ। গোষ্ঠীগুলি স্কুলের পোশাক প্রকল্পের অব্যবহৃত কাপড় থেকে এই ব্যাগ বানিয়ে প্রশাসনের কাছে বিক্রি করছে। আবার সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে জমা পড়া প্লাস্টিকেরও দাম পাচ্ছে।”

পরিবেশবিদদের মতে, বিশ্ব জুড়ে প্রতি মিনিটে প্রায় ২০ লক্ষ প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার হয়, যার পুরোটা মাটিতে মিশতে প্রায় এক হাজার বছর লাগে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ও জাতিসংঘ-এর গবেষণা সতর্ক করেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে ১২০ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমে যেতে পারে। তাই এ বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের (৫ জুন) মূল থিমই ছিল ‘প্লাস্টিক দূষণের অবসান’।

পুরুলিয়ার ইকো ব্রিক্স মডেল দেখাচ্ছে, প্লাস্টিককে সম্পদে পরিণত করে দূষণ রোধ আর অবকাঠামো উন্নয়ন—দুটিই সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের আশা, এই উদ্যোগ সফল হলে রাজ্যের অন্য জেলাতেও দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।

Post Comment