সুইটি চন্দ্র, পুরুলিয়া:
শতাব্দী প্রাচীন এক জলাশয়। পুরুলিয়া শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হুচুকপাড়ার দর্জিগড়িয়া পুকুর। এক সময় যার জল প্রাণ এনে দিত গোটা পাড়ায়। সেই পুকুর আজ আবর্জনার স্তূপে ঢেকে। ড্রেনের নোংরা জলে ভরে নিঃশব্দে হারিয়ে যেতে বসেছে। এক সময়ের গর্ব এখন এলাকাবাসীর অসহায়তার প্রতীক। পাড়ে আর দেখা মেলে না শিশুদের খেলাধূলা বা গৃহস্থালির কাজে ব্যস্ততার। তার বদলে সেখানে এখন পড়ে থাকে ইট, বালি, মাটি আর একরাশ দীর্ঘশ্বাস। স্থানীয় বাসিন্দা রিমা সেন বললেন,
“আমরা বহুবার অভিযোগ করেছি। আবেদন জানিয়েছি।কিন্তু কেউ শুনছেন না। যেখানে এক সময় আমরা স্নান করতাম। আজ সেখানে ইট ফেলা হচ্ছে। গন্ধে দাঁড়ানো যায় না।”
২০২২ সালের জুন মাসেও এই পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছিল, কয়েকজন প্রভাবশালী প্রোমোটার নিজেদের স্বার্থে পুকুরটি বুজিয়ে দিতে চাইছেন। তখন পুরসভা হস্তক্ষেপ করেছিল। কিন্তু তাতে ক্ষণিকের জন্য বন্ধ হয়েছিল কাজ। আজ আবার একই দৃশ্য—ধীরে ধীরে মাটি, ইট ও ড্রেনের জল দিয়ে দর্জিগড়িয়াকে ঢেকে ফেলা হচ্ছে।

পুকুরের চারদিকে গেঁথে উঠছে বাউন্ডারি। প্রশ্ন উঠছে—এ কি পরিকল্পিত লুকোনো আগ্রাসন? পুরুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পুকুর ভরাট চলছে। পুরসভা সব জেনেও নিশ্চুপ। আমরা বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হব।”
অন্যদিকে, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার
বিভাসরঞ্জন দাস বলেন,
“এটি পুকুর ভরাট নয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি শিশুদের খেলাধূলার জন্য ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি জানান, “ঘটনাটি সরজমিনে তদন্ত করে দেখা হবে। যদি সত্যতা প্রমাণিত হয়। তাহলে দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” উন্নয়নের নামে কি প্রাকৃতিক জলাধারকেই বলি দেওয়া হচ্ছে? শতাব্দীর সাক্ষী সেই পুকুর, যেটি এক সময় জীবনের ছন্দ ছিল—তা কি আজ কংক্রিটের নিচে চাপা পড়ে যাবে?
আজ আর সেই জলে পড়ে না কোনো প্রতিচ্ছবি—পড়ে শুধুই অবহেলা, প্রতারণা আর ব্যর্থতার ছায়া।
দর্জিগড়িয়া কাঁদছে!
Post Comment