insta logo
Loading ...
×

অ্যাকশন মোডে জেলা পুলিশ, রেল টেকার বিশেষ পরিকল্পনা কুড়মি সমাজের

অ্যাকশন মোডে জেলা পুলিশ, রেল টেকার বিশেষ পরিকল্পনা কুড়মি সমাজের

নিজস্ব প্রতিনিধি , পুরুলিয়া:

সেওয়াগের ব্যাটিংয়ের মতোই ঝোড়ো শুরু করল জেলা পুলিশ। শুক্রবার মধ্যরাত গড়াতেই কার্যত টিম ইন্ডিয়ার ওপেনারের ধাঁচে ‘অ্যাটাক মোডে’ চলে যায় গোটা বাহিনী। শনিবার ভোর থেকে আদিবাসী কুড়মি সমাজের অবরোধের ডাক থাকায় আগের রাতেই বিভিন্ন স্টেশনে গাঢ় অন্ধকারে জমায়েত হচ্ছিলেন কুড়মি সমর্থকরা। কিন্তু তাদের শেষমেশ আর সাজানো পরিকল্পনা কাজে লাগাতে দিল না পুলিশ। একের পর এক ধরপাকড়ে রাতভর চলে অভিযান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় ৬০ জনকে আটক করেছে জেলা পুলিশ।

প্রশাসনের দাবি, কলকাতা উচ্চ আদালতের রায় সামনে থাকলেও আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চালিয়ে সমর্থকদের উসকাচ্ছেন। তাঁর মোবাইল ফোন দু’টি বন্ধ থাকলেও শুক্রবার সকালে তিনি হঠাৎ ভিডিও বার্তায় হাইকোর্টের রায়ের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়েছেন বলে অভিযোগ। পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মানুষকে ভুল বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে। আমরা কড়া নজরে রেখেছি।”

শুক্রবার আদালতের রায় ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তাতে সরাসরি নামলেন পুরুলিয়া আদালতের সরকারি আইনজীবী বিশ্বরূপ পট্টনায়কও। সোজাসাপ্টা ভাষায় তিনি বলেন, “আদালতের রায় পরিষ্কার। অথচ যেভাবে এর বিকৃত ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারেন।” এরপরেই আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল খুঁটি মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতোকে খোঁচা দিয়ে বিশ্বরূপবাবুর কটাক্ষ, “উনি বোধহয় শব্দের অর্থই বুঝতে পারছেন না।”

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় জেলা জুড়ে শুক্রবার সারাদিন রুট মার্চ করেছে পুলিশ। মোতায়েন হয়েছে রেল পুলিশ ও রাজ্য পুলিশ। আশঙ্কা, ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ঝাড়খন্ড ও ওড়িশার স্টেশনগুলিতেও সমর্থকরা ট্রেন আটকাতে পারে। সেই কারণেই সীমান্তবর্তী এলাকায় কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে।

শুক্রবার সকালেই ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো। হাইকোর্টের রায়কে ঘিরে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালিয়েছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু তারপর থেকেই তাঁর দুটি মোবাইল ফোনই বন্ধ থাকায় যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

তবে সংগঠনের গ্রুপে বার্তা দেওয়া হয়েছে—বাংলা-ঝাড়খন্ড সীমান্তের কোনও এক স্টেশনে তিনি হাজির থাকবেন। কোথায়, তা শেষ মুহূর্তে গ্রুপে জানানো হবে। নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। কিন্তু কুড়মি সমাজের সূত্রে খবর, জঙ্গলমহল, ঝাড়খন্ড ও ওড়িশা মিলিয়ে একাধিক স্টেশনে ছোট ছোট দলে সমর্থকদের জড়ো করার ছক কষা হয়েছে। দশ থেকে বিশ জনের দল যেকোনও ট্রেন আটকে দিয়ে অবরোধ সফল করতে চাইছে।

শুক্রবার গভীর রাতের খবর বলছে, বাঘমুন্ডির সুইসা ও ঝালদার বেগুনকোদর স্টেশন এলাকায় অবরোধের চেষ্টা হয়েছে। সমর্থকরা পরিকল্পনা করছেন প্রত্যন্ত স্টেশনগুলিকেই নিশানা করার, যাতে হঠাৎ করে পুলিশ বা প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলা যায়। সেই তালিকায় আছে ঝাড়খন্ডের সনুয়া স্টেশনও।

অন্যদিকে, পুরুলিয়া শহরেও ক্ষোভ জমেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় মধ্যপল্লী থেকে মিছিল করে দুলমি এলাকায় মাহাতোর বাড়ির সামনে প্রতিবাদ সভা করেন স্থানীয় মানুষজন। সেখান থেকে কড়া ভাষায় নিন্দা করা হয় অবরোধ কর্মসূচির। এমনকি শহরের এক দুর্গাপুজো মণ্ডপকে কেন্দ্র করে এক কুড়মি সমর্থকের সমাজ মাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্য নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন উপস্থিতরা।

পুলিশ প্রশাসনও যে পরিস্থিতিকে কড়া নজরে রেখেছে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “আমরা সমাজ মাধ্যমের দিকেও নজর রাখছি। বিধি বহির্ভূত কোনও কিছু নজরে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ঝাড়খন্ড থেকে এখানে এসে যাতে কেউ অশান্তি না পাকাতে পারে তাই ইন্টার-স্টেট নাকা চলছে। এই পরিস্থিতিকে ঘিরে কোথাও যাতে কোনও সংঘাত না বাঁধে সেই দিকে আমাদের তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে।”

এদিকে, শনিবার থেকেই শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। ছাত্রছাত্রীদের যেন কোনও অসুবিধা না হয়, সে দিকেও বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে প্রশাসন। এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম বলেন, “অবরোধে মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াত ব্যাহত হলে তা বরদাস্ত করা হবে না। মহালয়ার মুখে রেল অবরোধ মানেই পুজোর মরশুমে সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলা।”

সব মিলিয়ে জঙ্গলমহলের আবহ এখন টানটান। একদিকে কুড়মি নেতারা জানাচ্ছেন, মৌলিক অধিকার আদায়ে তাঁদের লড়াই চলবে। অন্যদিকে প্রশাসন আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ম্যাচের প্রথম থেকেই কড়া হাতে ব্যাট চালাচ্ছে। পুজোর আগে এই লড়াই কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেই দিকেই তাকিয়ে জঙ্গলমহল।

Post Comment